Friday, December 18, 2020

"রান্নাটা ঠিক আসেনা" / ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়

 ভবানী প্রসাদ মজুমদারের "বাংলাটা ঠিক আসেনা"র প্যারোডি 

হেঁশেল আমার খুব হাইফাই, রান্নাবান্না হয়না 

জানেন দাদা, আমার আবার রান্নাটা ঠিক পোষায় না।   

মডিউলার কিচেন আমার খুব শখে বানানো 

কিচেন হব, সেরামিক টাইলস, চিমনি টিমনি লাগানো 

আমার আবার বাতিক খুব, কিচেন নোংরা করিনা  

জানেন দাদা, আমি আবার রান্নাবান্না পারিনা। 


মিক্সি টিক্সি, মাইক্রোওভেন, ওটিজি সবই মজুত 

কর্তামশায়ের বাজারের নেশা, বড়োই তরিজুত। 

কী লাভ বলুন রান্না করে? 

সবই মেলে বাড়ির দোরে 

সেইকারণেই আমি আবার তেমন কিছু বানাই না 

জানেন দাদা, আসলে আমার রান্নাটা ঠিক আসে না।


রান্না আবার কাজ নাকি, নেই কোনও ‘চার্ম’ রান্নায় 

হালুইকরে পারে যা, আমায় কি তা মানায়? 

চাইনিজ অথেনটিক 

কন্টিনেন্টল হেলদি 

বাংলা খাবারে আছেটা কি? গ্ল্যামার নেই জানেন না? 

জানেন দাদা, আমার আবার রান্নাটা ঠিক আসে না।


বাংলা রান্না যেমন তেমন, ঝোল ভাত খুব প্যানপ্যানে

ডাল-পোস্ত আলুসেদ্ধ একঘেয়ে আর ঘ্যানঘ্যানে।

এসব নিয়ে মাতামাতি, 

রান্নাঘরে হাতাহাতি 

কি যেন সব রাঁধত মায়ে? শীতের পৌষমাসে না?

জানেন দাদা, আমার আবার রান্নাটা ঠিক আসে না।


চাইনিজ সোজাসাপটা, সোজা আরও থাই 

স্যসের কেরামতি ডিমসাম্‌ স্যুই মাই। 

দইমাছ, মোচা থোড়, বোগাস আর বোরিং।

বড্ড রিচ মালাইকারি, আমি আবার ফড়িং। 

তবুও খেতাম যদি পেতাম, রাঁধতে ইচ্ছে করেনা  

জানেন দাদা, আমার আবার রান্নাটা ঠিক আসেনা। 


বাঙালী তো নালেঝোলে, চচ্চড়ি আর অম্বলে 

পোস্ত-শুক্তোয় নাড়িকাটা, ছ্যাঁচড়া-ভাপার স্বাদ পেলে 

রান্নার লোকের বড়ই অভাব

স্যুইগি জ্যোম্যাটো খাওয়াই স্বভাব

ওদের হাতে রান্না খেলে জুতসই ঠিক হয়না 

জানেন দাদা, আমার আবার রান্নাবান্না পোষায় না। 


বিদেশী রান্না না পারি, হেঁশেল আমার জব্বর 

বাঙালীর রান্না পারা কি আর এমন খবর? 

স্যান্ডুইচ, পিতজা, বার্গার এসব নিয়েই বাঁচি 

ভাত রুটি সব বাদ দিয়ে দিব্য বেঁচে আছি। 

এসব রান্না নিয়ে এখন কেউ সুখের স্বর্গে ভাসে না

জানেন দাদা, আমার আবার বাংলা রান্না আসেনা।


বাংলা রান্না তেল ঝাল আর হলুদ নুনে ঠাসা 

তার চেয়ে তন্দুরি আর কাবাবেই ভালোবাসা। 

মডিউলার কিচেন আমার, তেল কালি মোটে পড়েই না

জানেন দাদা, আমার আবার রান্নাবান্না জমেই না । 

Monday, September 28, 2020

এই সেই জন্ম-উপত্যকা

 সেই মৃত্যু উপত্যকা দেখে এলাম কবি। কি ভয়ংকর সে রূপ! 

কি দুর্গম তার তুষারলীলা। অহোরাত্র ভেজা ভেজা সৃষ্টিরহস্যের উপত্যকা। 

শীতলতায় এত শীত্কার হয় কবি? 

সে যেন সত্যি রংয়ে-তুলিতে আঁকা ছবি। 

পুরুষ আর প্রকৃতি দুয়ে মিলে এ কি সম্ভোগ দৃশ্য! 

পাহাড়ের গাম্ভীর্যে এত পৌরুষ? চোরা গ্লেসিয়ার হার মেনে যায় তার কাছে। 

আকাশের নীল, তুঁতের মত উজ্জ্বল হয়ে ওঠে সেই সম্ভোগ লীলা দেখতে দেখতে। 

তুষারের এই ঝর্ণাধারায় পাহাড় যেন কলকলিয়ে ওঠে। 

সেই মৃত্যু উপত্যকায় কবি, তুমি শুনেছিলে মরণ সঙ্গীত। 

আর আমার মত তুচ্ছ একজন শুনতে পেল জীবনের গান, বাঁচার গান। 

নদীর বহমানতা, পাহাড়ের শীতলতা আর আমার চোখ সাক্ষী রয়ে গেল 

পাহাড়ে চুক্তি স্বাক্ষরিত হল আমার সাথে মেঘের। 

মেঘের মিনার স্থানান্তরিত হল মৌসুমীর দেশে। 

বৃষ্টি ফোঁটারা উধাও তখন দিনকয়েকের জন্য। 

এ সেই মৃত্যু উপত্যকা কবি! 

আমি পা রাখলাম মরুপ্রান্তরে। 

যক্ষের রামগিরি পর্বত খুঁজে পেলাম যেন। 

বিরহিনীর কাছে মেঘ-মেল পৌঁছেচে তখুনি। 

আমার নীলচে আকাশের নীচে হলুদ বালুকাবেলা। 

কত আঁকাবাঁকা শৈল্পিক সাজগোজ সে বালির! 

উট চলেছে সেখানে মুখটি তুলে 

আর আমি পড়ে র‌ইলাম ঝুলে। 

সোনাগলা রোদ্দুর যেখানে চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়ে আইসিকলের ওপরে, 

স্ট্যালাগটাইটের মত বরফ ঝুলতেই থাকে বরফের গায়ে..

এই কি সেই মোহমায়া? যার অমোঘ টানে আমি হ‌ই ঘরছাড়া? 

তুমি তো বলেছিলে কবি, এ মৃত্যু-উপত্যকা আমার দেশ নয় 

আমি কিন্তু বারেবারে বলে এলাম, 

এই আমার দেশ, এই আমার জন্ম-উপত্যকা! 

পাহাড়ের প্রতিটি ভাঁজ আমার চেনা এখন। তেরঙ্গা পর্বতের চাদরের প্রতিটি ভাঁজ আমার চেনা।  

তুষারসাদা স্রোতকে আমি বিলক্ষণ চিনি এখন। 

ঠিক যেমন চিনি আমার মা, বাবাকে...

আমি‌ই তো সে, যে সৃষ্টিপাথরের রহস্য উন্মোচন করে 

চিনতে শিখল সেই জন্ম-উপত্যকা!

Monday, September 14, 2020

লেটস পার্টি টু'নাইট

  

গোদাবরী তীরে, ক্যাডবেরী মুখে, নাচে হ্যালবেরী মম্‌  

কোলাভেরী গানে, জিন-শেরী হাতে, নাচে মেরী-কেরী টম্‌ 

দোস্ত তেরী-মেরী, জ্বালাইল বিরী, ধরি শ্যামা-গোরী হাত। 

কত সহচরী, খায় ভেলপুরী, চটী কোলাপুরী কুপোকাত ।   

প্রেমে জলপরী, পরে সাতনরী,  গায় দরবারী কানাড়া

শাড়ী বালুচরী, পরে নসীপুরী,  খায় ভেজ-পকোড়া।

নটী শর্বরী, নাচে কুচিপুরী, রাসভারি বরাবরি 

আড়চোখে চায়, রসভরী খায়, অপছন্দ দাদাগিরি ।

রায় নরহরি, খালি ভাঙে সিঁড়ি, জড়াজড়ি করে দোতলায়

পাল বলহরি, গেয়ে আশাবরী, পায় কানাকড়ি ও'পাড়ায় ।

কেউ ধরাধরি, কেউ জোরাজুরি, খোঁটে ফুসকুড়ি অনীহায়

চাষী রাখোহরি, ছেড়ে থোড়বড়ি, রাঁধে চচ্চড়ি সেপাড়ায় ।

কেউ শাদীকরি, করে ছাড়াছাড়ি, বাড়াবাড়ি বেশীবেশী।

আমি পায়েপড়ি, বলি ধ্যুত্‌‌তেরী, আহামরি দিবানিশি।

Friday, June 5, 2020

করোনার রান্নাঘর


করোনাকালের শুরুতেই ছিল ফ্যানাভাত আলুপোস্ত
আর ছিল ফ্যানস্যুপ, ম্যাগি, চাউ, ছিলনা কেবলি গোস্ত।
ডালের সঙ্গে রোজরোজ আছে খসখসে খোসা স্টারফ্রাই
আলুভাতের ইনোভেশনে মনে বড় যেন বড় জোর পাই।
পিঁয়াজ আর শশা লঙ্কা কুচিয়ে স্যালাড আর দই রায়তা
একটু আধটু জিভের টাকনা মন্দ লাগেনা ভাতটা।
পরে এলো ঘরে শাক সুক্তুনি ঝাল ঝোল আর অম্বল
পটল বেগুণে দই ঘেঁটে দিই যদি থাকে টক দম্বল।
খিচুড়ি বেগুনি চালেডালে মিশে করোনার দিন থইথই
রাতেরবেলায় দিব্য চলেছে খই কলা আর টক দই।
সুফলবাংলা রাঙা আলু দিল বানালাম পান্তুয়া
সুজি দুধ গুলে বানাতেই পারো চটপট মালপুয়া।
বাঙালির নুচি, অগতির গতি উপোসের রাতে যদি চাও
ছাতুর পরোটা গুড ফর হেলথ, ময়ানটা যদি কম দাও।
সুজির হালুয়া, ফ্রুট কাস্টারড, পুডিং আর ছিল পায়েস
এত জানি তাই বাইরে কিনিনি খেয়ে করে গেছি আয়েস।
ময়দা ভিজিয়ে, চালগুঁড়ো দিয়ে জিলিপিও ভেজে খাসা
সাধ ছিল যেন মুচমুচে হয় রসে ফেলবার আশা।
দুদিন দুধ কেটে গেল দেখে কাটিয়ে ফেলেছি ছানা
জাঁক দিয়ে তাকে কালাকান্দ করে তাক লাগিয়েছি যা না!
তাই দেখে তিনি রোজই বলেন দুধ যেন কেটে যায়
মিষ্টি বিহনে রাতের খানা খেতে মন নাই চায়।
বেসন আর সুজি টক দই ইনো ফ্রুটসল্টের ধোকলা
কারিপাতা আর সরষে ফোড়নে খেয়ে নেবে সব ফোকলা।
গোলারুটি ছিল ভারি মজাদার ছড়িয়ে পেঁয়াজ কুচি
খাটুনি হয়েছে যেদিন ভেজেছি বেগুন আর কটা লুচি।
শেষপাতে ভাই শাশুড়ির চাই টকমিষ্টি চাটনি
চাটনি বানানো সবচেয়ে সোজা একটুও নেই খাটনি।
কুড়োনো আমের পাল্পে ঢেলেছি চিনি আর শুধু চিনি
শিশি ভরে জ্যাম বানিয়ে ফেলেছি আর যেন নাই কিনি।
ঝড়ে পড়া মোচা পেয়েছি ফোকটে, চিংড়ি দিয়েছে বাদাবন
মোচাচিংড়ির এমন সোয়াদ পায়নি বাড়ির লোকজন।
কেউ শুনছি লকডাউনেই বানিয়েছে বিরিয়ানি।
শুনেই কেন যে কান্না এসেছে এখনও বুঝতে পারিনি।
সাবেকী রান্নাঘরেতে রয়েছে বাটি চচ্চড়ি ডানলা
স্বাদে ও গন্ধে আমোদিত তারা ফোড়নেই মাত জানলা।   

Wednesday, June 3, 2020

অভিশপ্ত বুধবার


একডজন লকডাউনের বুধবার পেরুবো আজ। গত দুটো বুধবারের সেই অভিশপ্ত ঝড়ের রাতের দগদগে ঘা এখনো শুকোয় নি আমার। আজ আবারো বুধবার এসে পড়লেই বুক চিন্‌ চিন্‌ করছে। আড়ষ্ট হয়ে আছি। তার মধ্যে মৌসুমী বায়ুর কেরালায় প্রবেশ। মনসুন এসে গেলেই অন্যবার মনে হয় একটা ফিলগুড ফ্যাক্টর কাজ করছে আমাদের সবার। ভালো চাষবাস হবে, দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। জিডিপি বাড়বে সেই আশায়। এবার সে গুড়ে বালি। একে একে বিয়ের মরশুম বৈশাখ, জৈষ্ঠ্য, আষাঢ়, শ্রাবণ পেরিয়ে আবারো ভাদ্র, আশ্বিন, কার্তিক মাসে কোনো শুভকাজ হবেনা বাঙালীর। এই বিয়ের মরশুমে প্রচুর বিক্রিবাট্টা হত। গয়না থেকে শাড়ি, উপহার থেকে খাবারদাবার, মুদিখানা মায় দশকর্ম, প্রসাধনী দ্রব্য থেকে তত্ত্ব সাজানোর ট্রে, ফুল থেকে মালা এমন কি ডেকরেটার থেকে কেটারার... সব ছোটো, বড়, মাঝারি ব্যাবসায়ীদের অর্থনৈতিক মাস এই মরশুম। আবারো অপেক্ষা অঘ্রাণের জন্য। এবছর পুজো, দেওয়ালি তেমন জমবে না। কিছুই কেনাকাটি হয়ত হবেনা। পৌষ আবার মলোমাস।  মাঘ-ফাগুনের পর আবারো চৈত্র মাসে কোনো শুভ কাজ নেই। এসব ভাবছিলাম আমার ভাঙা কাচের আদিগন্ত বিস্তৃত সেই দেওয়ালের দিকে চেয়ে।  হঠাত দেখি উল্টোদিকের একটি বাড়িতে বাঁশ বাঁধা হচ্ছে বেশ সমারোহে। আহা! হোক, হোক। বেশ কিছু লোকজন কাজ করছে। বিয়ে হবে হয়ত ঘটা করে। সব‌ই হয়ত পূর্ব নির্ধারিত। রান্নার ঠাকুর, ডেকরেটার, ফুল, মালা, মাছ, মাংস, শাড়ি গয়না সব কিনবে এই বাড়ির লোকজন। আহা! কিনুক, খরচা করুক। কেন‌ই বা তারা বিয়ে দেবেনা? কিন্তু বর্ষা যেন আর না আসে দাপিয়ে। ঝড় যেন আর না আসে অভিসারে। কিন্তু আজ যে আবার বুধবার। সে কি শুনবে?
গতকালই তো বর্ষার প্রিওয়েডিং ফোটোশ্যুট ছিল। ঘন মেঘনীল শিফনশাড়ি, জলের ফোঁটার মত স্পার্কলিং মুক্তোর গয়নায় কাল দারুণ সেজেছিল মেয়েটা। সবচেয়ে সুন্দর ছিল চোখের মেকআপ। ঘনকালো চোখের পাতা ছুঁয়ে আকাশী রং লাইনার।বিয়ের আগের দিন সব মেয়েদের চোখ থাকে এমনই নরম। তারপর সব কেমন বদলে যাবে টুক করে। নরমে গরমে সেই চাউনিই হবে কাল। ভাবী বর মেঘও কাল ছিল অন্যপুরুষ। পরণে ছিল নেভিব্ল্যু রেশমি  শেরওয়ানি।সে ও বুঝি কঠিন হবে আগের থেকে। এই যেমন হঠাত এল করোনা, তার পেছন পেছন আমাপান। আবার আসছে নিসর্গ। কিন্তু আমার মোটেও ভালো লাগেনি বর্ষা আর মেঘের এবারের এই বিয়ের ভাবনা।

আমাদের জীবন কেমন বদলে বেরঙীন হয়ে গেল! সবটুকুনি কবে বর্ষার প্রিওয়েডিং ফোটোশ্যুটের মত আবারো রঙীন হয়ে উঠবে? 

Tuesday, May 19, 2020

মঙ্গলচণ্ডীর করোনা পুরাণ

আজ আমার দুই মা আর আমি জৈষ্ঠ্যমাসের প্রথম মঙ্গলবারে প্রতিবারের মতোই জয় মঙ্গলবারের পুজো তুলে রেখে ছড়া পড়ে জল খেলাম। আমার মায়ের কলাপাতার খিলিতে যব, মাসকলাই দিয়ে গদ গেলা আছে আমার শ্বশুরবাড়ি তে নেই । আমার মায়ের ব্রতকথা পড়া আছে আমার মর্ডান শ্বশুরবাড়িতে নেই। তবে ব্রতকথার শুরুতে ছড়াটা দুই বাড়িতেই এক।

আটকাঠি, আটমুঠি, সোনার মঙ্গলচন্ডী রূপোর বালা কেন মাগো মঙ্গলচন্ডী হল এত বেলা?
হাসতে খেলতে, তেল হলুদ মাখতে, আঘাটায় ঘাট করতে, পাটের শাড়ি পরতে, আইবুড়োর বিয়ে দিতে,
হাপুতির পুত দিতে, অশরণের শরণ দিতে, অন্ধের চক্ষু দিতে, বোবার বোল ফোটাতে, 
ঘরের ঝি-বৌ রাখতে ঢাকতে তাই এত বেলা।
আমি আজ ছড়াটা পড়েই ভাবলাম, এর একটা বিহিত করে মঙ্গলচন্ডীর কাছে আর্জি জানানোর প্রয়োজন। 
তাই বললাম,
আটকাঠি, আটমুঠি, সোনার মঙ্গলচন্ডী রূপোর বালা কেন মাগো মঙ্গলচন্ডী হল এত বেলা?
হাসতে খেলতে, সাবান মেখে চান করতে, গ্লাভস, মাস্ক বিলি করতে, স্যানিটাইজ করতে করতে, ঘরের ঝি-বৌদের হাইজিন শেখাতে শেখাতে, করোনা সংক্রমণ রুখতে হল এত বেলা।
আবারো বলি,
আটকাঠি, আটমুঠি, সোনার মঙ্গলচন্ডী রূপোর বালা, তুমি কি মা অন্ধ নাকি বোবা কালা?
উনি বললেন,
কি আর করি? পরিযায়ী শ্রমিক বাঁচাতে, ক্ষুধাতুরে অন্ন দিতে, রেশনে ত্রাণ বিলি করতে, আসন্ন পোয়াতির সুখপ্রসব করাতে, খাদ্যবন্টনে দুর্নীতি রুখতে, আর্থিক প্যাকেজের অর্থ বোঝাতে, বোঝাতে কেটে গেল বেলা।
আমি আবারো বলে উঠলাম,
আটকাঠি, আটমুঠি, সোনার মঙ্গলচন্ডী রূপোর বালা, মানুষের জীবন নিয়ে আর করবে কত খেলা? 
উনি বললেন,
কথা বলিস না, দেব মার, থুতু থেকেই যতকিছু শিখিয়ে পারিনা আর! 
গোষ্ঠী সংক্রমণ রুখতে, বুড়োদের ঘরে বন্দী করতে, ফল সবজি সাবান জলে ধুতে ধুতে, বাইরের জুতো বাইরে রাখতে, রাস্তার মোড়ে আড্ডা রুখতে রুখতে, বাজার বন্ধ করতে করতে আসছি, আমার যে বড় জ্বালা।
আর তুই কিনা কোস্‌ এত বেলা?
আমি এবার ছোট্ট করে ক‌ইলাম,
আটকাঠি আটমুঠি সোনার মঙ্গলচন্ডী, কোথায় টেষ্ট কিট? কোথায় ভ্যাকসিন?
মা মঙ্গলচন্ডী বললেন, হচ্চে তো সবকিছু,
এন্টিবডি টেষ্ট, ক্লোরোকুইন, রেমডেসিভির কিম্বা ফ্যাবিটিডিন
অতিমারি এর নাম সবুর কর্‌ আর কটা দিন!  

Sunday, May 10, 2020

খোলাচিঠি রবিঠাকুরকে....


তুমি না কি স্কুল পালিয়ে ছবির খাতায় আঁকো  ?
গোল্লাছুটের দুপুরগুলোয় কাব্যি করে লেখো?
রবিঠাকুর তোমার নাকি  খুনসুটির এই ভোর
গান লিখতে  সিঁড়ি ভেঙে চিলেকোঠার দোর ।
রবিঠাকুর তুমি চেনো মেঘের কোলে রোদ ?
জীবনভর তোমার দেনা কেমনে করি শোধ ? 
ছোট্টবেলায় মা চেনালো রবিকবির আলো
সেইতো আমার হাতেখড়ি গান-বিকেলের ভালো ।
রবিঠাকুর তোমায় যদি সেলফোনেতে পেতাম
এসেমেসের বৃষ্টি ফোঁটা উজাড় করে দিতাম । 

রবিঠাকুর জানো তুমি মাল্টিপ্লেক্সের ঢল্‌ ?
তোমার গল্প-গানছবিতে মাতাল শপিংমল ।
রবিঠাকুর দেখবে তুমি ফ্লাইওভারের ধারে
হোর্ডিং ওলা রঙিন ছবি শিল্পী সারেসারে ।
দেড়শো তোমার পূর্ণ হ'ল পুজোয় মাতে লোক
প্রভাতফেরী গানের ভেরী দেড়শো মানার ঝোঁক । 

রবিকবি তুমি না কি ফেসবুকেতে আছো?
স্টেটাসে তে কাব্যি ঝরাও মনের সুখে বাঁচো ।
রবীন্দ্রনাথ আছো তুমি যন্ত্রজালে বন্দী
ট্যুইট দেখি মাঝেসাঝে বুঝি নাকি ফন্দী ?
রবিঠাকুর রবিঠাকুর খোলা খেরোখাতা
ছিটেফোঁটা দাওনা লিখে মনের দুটো কথা ।