Tuesday, May 19, 2020

মঙ্গলচণ্ডীর করোনা পুরাণ

আজ আমার দুই মা আর আমি জৈষ্ঠ্যমাসের প্রথম মঙ্গলবারে প্রতিবারের মতোই জয় মঙ্গলবারের পুজো তুলে রেখে ছড়া পড়ে জল খেলাম। আমার মায়ের কলাপাতার খিলিতে যব, মাসকলাই দিয়ে গদ গেলা আছে আমার শ্বশুরবাড়ি তে নেই । আমার মায়ের ব্রতকথা পড়া আছে আমার মর্ডান শ্বশুরবাড়িতে নেই। তবে ব্রতকথার শুরুতে ছড়াটা দুই বাড়িতেই এক।

আটকাঠি, আটমুঠি, সোনার মঙ্গলচন্ডী রূপোর বালা কেন মাগো মঙ্গলচন্ডী হল এত বেলা?
হাসতে খেলতে, তেল হলুদ মাখতে, আঘাটায় ঘাট করতে, পাটের শাড়ি পরতে, আইবুড়োর বিয়ে দিতে,
হাপুতির পুত দিতে, অশরণের শরণ দিতে, অন্ধের চক্ষু দিতে, বোবার বোল ফোটাতে, 
ঘরের ঝি-বৌ রাখতে ঢাকতে তাই এত বেলা।
আমি আজ ছড়াটা পড়েই ভাবলাম, এর একটা বিহিত করে মঙ্গলচন্ডীর কাছে আর্জি জানানোর প্রয়োজন। 
তাই বললাম,
আটকাঠি, আটমুঠি, সোনার মঙ্গলচন্ডী রূপোর বালা কেন মাগো মঙ্গলচন্ডী হল এত বেলা?
হাসতে খেলতে, সাবান মেখে চান করতে, গ্লাভস, মাস্ক বিলি করতে, স্যানিটাইজ করতে করতে, ঘরের ঝি-বৌদের হাইজিন শেখাতে শেখাতে, করোনা সংক্রমণ রুখতে হল এত বেলা।
আবারো বলি,
আটকাঠি, আটমুঠি, সোনার মঙ্গলচন্ডী রূপোর বালা, তুমি কি মা অন্ধ নাকি বোবা কালা?
উনি বললেন,
কি আর করি? পরিযায়ী শ্রমিক বাঁচাতে, ক্ষুধাতুরে অন্ন দিতে, রেশনে ত্রাণ বিলি করতে, আসন্ন পোয়াতির সুখপ্রসব করাতে, খাদ্যবন্টনে দুর্নীতি রুখতে, আর্থিক প্যাকেজের অর্থ বোঝাতে, বোঝাতে কেটে গেল বেলা।
আমি আবারো বলে উঠলাম,
আটকাঠি, আটমুঠি, সোনার মঙ্গলচন্ডী রূপোর বালা, মানুষের জীবন নিয়ে আর করবে কত খেলা? 
উনি বললেন,
কথা বলিস না, দেব মার, থুতু থেকেই যতকিছু শিখিয়ে পারিনা আর! 
গোষ্ঠী সংক্রমণ রুখতে, বুড়োদের ঘরে বন্দী করতে, ফল সবজি সাবান জলে ধুতে ধুতে, বাইরের জুতো বাইরে রাখতে, রাস্তার মোড়ে আড্ডা রুখতে রুখতে, বাজার বন্ধ করতে করতে আসছি, আমার যে বড় জ্বালা।
আর তুই কিনা কোস্‌ এত বেলা?
আমি এবার ছোট্ট করে ক‌ইলাম,
আটকাঠি আটমুঠি সোনার মঙ্গলচন্ডী, কোথায় টেষ্ট কিট? কোথায় ভ্যাকসিন?
মা মঙ্গলচন্ডী বললেন, হচ্চে তো সবকিছু,
এন্টিবডি টেষ্ট, ক্লোরোকুইন, রেমডেসিভির কিম্বা ফ্যাবিটিডিন
অতিমারি এর নাম সবুর কর্‌ আর কটা দিন!  

No comments:

Post a Comment