Monday, September 28, 2020

এই সেই জন্ম-উপত্যকা

 সেই মৃত্যু উপত্যকা দেখে এলাম কবি। কি ভয়ংকর সে রূপ! 

কি দুর্গম তার তুষারলীলা। অহোরাত্র ভেজা ভেজা সৃষ্টিরহস্যের উপত্যকা। 

শীতলতায় এত শীত্কার হয় কবি? 

সে যেন সত্যি রংয়ে-তুলিতে আঁকা ছবি। 

পুরুষ আর প্রকৃতি দুয়ে মিলে এ কি সম্ভোগ দৃশ্য! 

পাহাড়ের গাম্ভীর্যে এত পৌরুষ? চোরা গ্লেসিয়ার হার মেনে যায় তার কাছে। 

আকাশের নীল, তুঁতের মত উজ্জ্বল হয়ে ওঠে সেই সম্ভোগ লীলা দেখতে দেখতে। 

তুষারের এই ঝর্ণাধারায় পাহাড় যেন কলকলিয়ে ওঠে। 

সেই মৃত্যু উপত্যকায় কবি, তুমি শুনেছিলে মরণ সঙ্গীত। 

আর আমার মত তুচ্ছ একজন শুনতে পেল জীবনের গান, বাঁচার গান। 

নদীর বহমানতা, পাহাড়ের শীতলতা আর আমার চোখ সাক্ষী রয়ে গেল 

পাহাড়ে চুক্তি স্বাক্ষরিত হল আমার সাথে মেঘের। 

মেঘের মিনার স্থানান্তরিত হল মৌসুমীর দেশে। 

বৃষ্টি ফোঁটারা উধাও তখন দিনকয়েকের জন্য। 

এ সেই মৃত্যু উপত্যকা কবি! 

আমি পা রাখলাম মরুপ্রান্তরে। 

যক্ষের রামগিরি পর্বত খুঁজে পেলাম যেন। 

বিরহিনীর কাছে মেঘ-মেল পৌঁছেচে তখুনি। 

আমার নীলচে আকাশের নীচে হলুদ বালুকাবেলা। 

কত আঁকাবাঁকা শৈল্পিক সাজগোজ সে বালির! 

উট চলেছে সেখানে মুখটি তুলে 

আর আমি পড়ে র‌ইলাম ঝুলে। 

সোনাগলা রোদ্দুর যেখানে চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়ে আইসিকলের ওপরে, 

স্ট্যালাগটাইটের মত বরফ ঝুলতেই থাকে বরফের গায়ে..

এই কি সেই মোহমায়া? যার অমোঘ টানে আমি হ‌ই ঘরছাড়া? 

তুমি তো বলেছিলে কবি, এ মৃত্যু-উপত্যকা আমার দেশ নয় 

আমি কিন্তু বারেবারে বলে এলাম, 

এই আমার দেশ, এই আমার জন্ম-উপত্যকা! 

পাহাড়ের প্রতিটি ভাঁজ আমার চেনা এখন। তেরঙ্গা পর্বতের চাদরের প্রতিটি ভাঁজ আমার চেনা।  

তুষারসাদা স্রোতকে আমি বিলক্ষণ চিনি এখন। 

ঠিক যেমন চিনি আমার মা, বাবাকে...

আমি‌ই তো সে, যে সৃষ্টিপাথরের রহস্য উন্মোচন করে 

চিনতে শিখল সেই জন্ম-উপত্যকা!

No comments:

Post a Comment