Sunday, February 10, 2013

অপেক্ষা

ছরের শেষে ফাগুনের হাওয়ায় মুকুলিত আমগাছ দেখে মনে পড়ে যায় বোশেখির কথা । ফুরফুরে দখিনা হাওয়াকে উড়িয়ে নিয়ে যায় চৈত্রের অকাল বোশেখি । অপেক্ষায় থাকি ভয়ে ভয়ে গরমের দিনগুলোর । পাতাঝরা দিনের শেষে , মেঘলা আকাশে বৃষ্টি যেন দুদন্ড জিরেন দেয় । তারপর জৈষ্ঠ্যের কালো মেঘের ঘনঘটা দেখে আকুল অয়ে ওঠে প্রাণ । মেঘ না মৌসুমী ? সেই অপেক্ষার অবসান হয়  আষাঢ়ের বৃষ্টির বার্তায় ।  শ্রাবণের ধারায়  ঝরে পড়ে আকাশের খুশি, বাতাসের আনন্দ । ভরা ভাদ্রের থৈ থৈ দেখে মনে পড়ে যায় নীল আকাশের গায়ে ভেসে চলা পেঁজা তুলোট মেঘের ভেলার কথা । আগমনীর আবাহন ফুটে ওঠে পান্নাপুকুরে শাপলা শালুকের রঙে । আবারো অপেক্ষা কাশের বনে, পদ্মপাতায়, ঢাকের আওয়াজে  শিউলির গন্ধ নিতে নিতে । আশ্বিনের সেই অপেক্ষা ভরিয়ে দেয় মাদুগ্গা দিন কয়েকের জন্যে । এবার বাতাসে হিম । কার্তিকের আকাশপ্রদীপ ভূত চতুর্দশীর অন্ধকারকে মোহময় করে তোলে । দীপাবলীর অপেক্ষায় আলোর উত্সবে মাতোয়ারা হ‌ই । হেমন্তের পাখি গান গেয়ে যায় । শীত আসছে সেই অপেক্ষায় নেচে ওঠে মনটা ।  এবার অপেক্ষা পৌষপার্বণের্, নবান্নের । নতুন ধানের সোনার রং ঝরে পড়ে সবুজ ক্ষেতে, বাংলার ঘরে ঘরে । যৌবনবতী  চাষীবৌটির অপেক্ষা । তার সারাবছরের চাওয়া-পাওয়ার  হিসেবনিকেশ মেলানোর পালা । এবার রংয়ের আগুণ লাগবে সেই অপেক্ষা । অশোক-পলাশ-শিমূলের রং লাগবে কচিকাঁচার গায়ে, কিশোর-কিশোরীর মনে । যদি একটুকু ছোঁয়া লাগে  সেই অপেক্ষায় । 
 আর আমাদের মত আদার ব্যাপারীর অপেক্ষার শেষ নেই । এক বসন্ত আসে, এক চলে যায় । আবারো শুনি  কোকিলের গান । আবারো
মাখি  ফাগুনের রং । আবার নতুন করে পাবো বলে সেই অপেক্ষায় থেকে যাই । আবারো তার অপেক্ষায় দিনগোনার শুরু হয় ঠিক যেমন প্রতি শুক্রবার তোমার সাথে আমাদের ডেটের অপেক্ষায় সারা সপ্তাহ বসে থাকি তুমি আসবে বলে  
প্রতি অণুপল গোনার অপেক্ষা শুধু   তোমার জন্যে ।

No comments:

Post a Comment