Friday, June 5, 2020

করোনার রান্নাঘর


করোনাকালের শুরুতেই ছিল ফ্যানাভাত আলুপোস্ত
আর ছিল ফ্যানস্যুপ, ম্যাগি, চাউ, ছিলনা কেবলি গোস্ত।
ডালের সঙ্গে রোজরোজ আছে খসখসে খোসা স্টারফ্রাই
আলুভাতের ইনোভেশনে মনে বড় যেন বড় জোর পাই।
পিঁয়াজ আর শশা লঙ্কা কুচিয়ে স্যালাড আর দই রায়তা
একটু আধটু জিভের টাকনা মন্দ লাগেনা ভাতটা।
পরে এলো ঘরে শাক সুক্তুনি ঝাল ঝোল আর অম্বল
পটল বেগুণে দই ঘেঁটে দিই যদি থাকে টক দম্বল।
খিচুড়ি বেগুনি চালেডালে মিশে করোনার দিন থইথই
রাতেরবেলায় দিব্য চলেছে খই কলা আর টক দই।
সুফলবাংলা রাঙা আলু দিল বানালাম পান্তুয়া
সুজি দুধ গুলে বানাতেই পারো চটপট মালপুয়া।
বাঙালির নুচি, অগতির গতি উপোসের রাতে যদি চাও
ছাতুর পরোটা গুড ফর হেলথ, ময়ানটা যদি কম দাও।
সুজির হালুয়া, ফ্রুট কাস্টারড, পুডিং আর ছিল পায়েস
এত জানি তাই বাইরে কিনিনি খেয়ে করে গেছি আয়েস।
ময়দা ভিজিয়ে, চালগুঁড়ো দিয়ে জিলিপিও ভেজে খাসা
সাধ ছিল যেন মুচমুচে হয় রসে ফেলবার আশা।
দুদিন দুধ কেটে গেল দেখে কাটিয়ে ফেলেছি ছানা
জাঁক দিয়ে তাকে কালাকান্দ করে তাক লাগিয়েছি যা না!
তাই দেখে তিনি রোজই বলেন দুধ যেন কেটে যায়
মিষ্টি বিহনে রাতের খানা খেতে মন নাই চায়।
বেসন আর সুজি টক দই ইনো ফ্রুটসল্টের ধোকলা
কারিপাতা আর সরষে ফোড়নে খেয়ে নেবে সব ফোকলা।
গোলারুটি ছিল ভারি মজাদার ছড়িয়ে পেঁয়াজ কুচি
খাটুনি হয়েছে যেদিন ভেজেছি বেগুন আর কটা লুচি।
শেষপাতে ভাই শাশুড়ির চাই টকমিষ্টি চাটনি
চাটনি বানানো সবচেয়ে সোজা একটুও নেই খাটনি।
কুড়োনো আমের পাল্পে ঢেলেছি চিনি আর শুধু চিনি
শিশি ভরে জ্যাম বানিয়ে ফেলেছি আর যেন নাই কিনি।
ঝড়ে পড়া মোচা পেয়েছি ফোকটে, চিংড়ি দিয়েছে বাদাবন
মোচাচিংড়ির এমন সোয়াদ পায়নি বাড়ির লোকজন।
কেউ শুনছি লকডাউনেই বানিয়েছে বিরিয়ানি।
শুনেই কেন যে কান্না এসেছে এখনও বুঝতে পারিনি।
সাবেকী রান্নাঘরেতে রয়েছে বাটি চচ্চড়ি ডানলা
স্বাদে ও গন্ধে আমোদিত তারা ফোড়নেই মাত জানলা।   

Wednesday, June 3, 2020

অভিশপ্ত বুধবার


একডজন লকডাউনের বুধবার পেরুবো আজ। গত দুটো বুধবারের সেই অভিশপ্ত ঝড়ের রাতের দগদগে ঘা এখনো শুকোয় নি আমার। আজ আবারো বুধবার এসে পড়লেই বুক চিন্‌ চিন্‌ করছে। আড়ষ্ট হয়ে আছি। তার মধ্যে মৌসুমী বায়ুর কেরালায় প্রবেশ। মনসুন এসে গেলেই অন্যবার মনে হয় একটা ফিলগুড ফ্যাক্টর কাজ করছে আমাদের সবার। ভালো চাষবাস হবে, দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। জিডিপি বাড়বে সেই আশায়। এবার সে গুড়ে বালি। একে একে বিয়ের মরশুম বৈশাখ, জৈষ্ঠ্য, আষাঢ়, শ্রাবণ পেরিয়ে আবারো ভাদ্র, আশ্বিন, কার্তিক মাসে কোনো শুভকাজ হবেনা বাঙালীর। এই বিয়ের মরশুমে প্রচুর বিক্রিবাট্টা হত। গয়না থেকে শাড়ি, উপহার থেকে খাবারদাবার, মুদিখানা মায় দশকর্ম, প্রসাধনী দ্রব্য থেকে তত্ত্ব সাজানোর ট্রে, ফুল থেকে মালা এমন কি ডেকরেটার থেকে কেটারার... সব ছোটো, বড়, মাঝারি ব্যাবসায়ীদের অর্থনৈতিক মাস এই মরশুম। আবারো অপেক্ষা অঘ্রাণের জন্য। এবছর পুজো, দেওয়ালি তেমন জমবে না। কিছুই কেনাকাটি হয়ত হবেনা। পৌষ আবার মলোমাস।  মাঘ-ফাগুনের পর আবারো চৈত্র মাসে কোনো শুভ কাজ নেই। এসব ভাবছিলাম আমার ভাঙা কাচের আদিগন্ত বিস্তৃত সেই দেওয়ালের দিকে চেয়ে।  হঠাত দেখি উল্টোদিকের একটি বাড়িতে বাঁশ বাঁধা হচ্ছে বেশ সমারোহে। আহা! হোক, হোক। বেশ কিছু লোকজন কাজ করছে। বিয়ে হবে হয়ত ঘটা করে। সব‌ই হয়ত পূর্ব নির্ধারিত। রান্নার ঠাকুর, ডেকরেটার, ফুল, মালা, মাছ, মাংস, শাড়ি গয়না সব কিনবে এই বাড়ির লোকজন। আহা! কিনুক, খরচা করুক। কেন‌ই বা তারা বিয়ে দেবেনা? কিন্তু বর্ষা যেন আর না আসে দাপিয়ে। ঝড় যেন আর না আসে অভিসারে। কিন্তু আজ যে আবার বুধবার। সে কি শুনবে?
গতকালই তো বর্ষার প্রিওয়েডিং ফোটোশ্যুট ছিল। ঘন মেঘনীল শিফনশাড়ি, জলের ফোঁটার মত স্পার্কলিং মুক্তোর গয়নায় কাল দারুণ সেজেছিল মেয়েটা। সবচেয়ে সুন্দর ছিল চোখের মেকআপ। ঘনকালো চোখের পাতা ছুঁয়ে আকাশী রং লাইনার।বিয়ের আগের দিন সব মেয়েদের চোখ থাকে এমনই নরম। তারপর সব কেমন বদলে যাবে টুক করে। নরমে গরমে সেই চাউনিই হবে কাল। ভাবী বর মেঘও কাল ছিল অন্যপুরুষ। পরণে ছিল নেভিব্ল্যু রেশমি  শেরওয়ানি।সে ও বুঝি কঠিন হবে আগের থেকে। এই যেমন হঠাত এল করোনা, তার পেছন পেছন আমাপান। আবার আসছে নিসর্গ। কিন্তু আমার মোটেও ভালো লাগেনি বর্ষা আর মেঘের এবারের এই বিয়ের ভাবনা।

আমাদের জীবন কেমন বদলে বেরঙীন হয়ে গেল! সবটুকুনি কবে বর্ষার প্রিওয়েডিং ফোটোশ্যুটের মত আবারো রঙীন হয়ে উঠবে?