Saturday, December 12, 2015

নারী তোমাকে



মনে আছে কলকাতা?

 লোকসখা পত্রিকায় লিখতে বলা হয়েছিল কবিতার প্রেরণায় কবিতা লেখার কথা। আমাকে তারাপদ রায়ের যেকোনো কবিতার অণুসরণে লিখতে বলা হয়েছিল। তারাপদ রায় আমার বাড়ির খুব কাছাকাছি থাকতেন। তাই একটু বিশেষ দুর্বলতাও ছিল। তাঁর কলকাতার ওপর এই কবিতাটি বেছেছিলাম। লোকসখার এই সংকলনে ১৮০ জন নামী কবির পাশাপাশি ১৮০ নতুন, পরিচিত কবিরাও আছেন। একটি অনবদ্য কবিতা সংকলন এটি। আমি জায়গা পেয়ে কৃতার্থ। রবিঠাকুর থেকে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, বিষ্ণু দে থেকে জীবনানন্দ, চৈতালী চট্টোপাধ্যায় থেকে তপন বন্দ্যোপাধ্যায়, জয় গোস্বামী থেকে শ্রীজাত কেউ বাদ নেই। আরো কতজনের নাম বলি?



Tuesday, October 13, 2015

"দশভুজা" / ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়

ভাঙলো কি ঘুম শহরবাসীর? জাগলে কি দশভুজা? 
তোমার জন্য শিউলি কুড়োই, বাবুর বাড়ির পূজা। 
ফুলও তুলি, পুজোঘর ধুই, তেনাদের আজ  তর্পণ ।
"কোশাকুশি যেন চকচকে হয়" আগেভাগেই সে গর্জন  । 
হ্যাঁগো মাদুর্গা? তোমার তো দিব্য দশটিহাতের জোর। 
দশভুজা আমি কখন দেখব  মহালয়ার এ ভোর? 

আমিও  দুর্গা মহালয়ার আকাশবাণীর ঊষায়
ধড়মড়িয়ে চোখ রেখেছি  ছোট্ট ঘড়ির কাঁটায় ।
"জাগোদুর্গা" ডাক দিলো ঐ, দশভুজার মন্ত্রে  
সবজী কাটি, মশলা পিষি,  কাজের যন্ত্রেতন্ত্রে  । 
আমিও দুর্গা বুঝতে পারি  মহালয়া এলো
দূর থেকে দেখতে যে পাই  আগমনীর আলো।

পোড়া কড়াই, ডেকচি হাঁড়ির ঝনঝনানি শব্দে 
বাজলো বুঝি আলোর বেণু? "বাসনগুলো ধুয়ে দে!" 
আমিও দুর্গা ভোর ভরেছি  রঙ্গিন টিভির শোয়ে
"নে, নে এবার ঝাড়াপোঁছা কর, টিভিতে না চেয়ে" । 
আমিও দুর্গা উপু হয়ে বসি এবার সাবানকাচায় 
"বুরুশ দিয়ে ঘষিস বাপু" বড্ড ময়লা থাকায়।

আমিও দুর্গা দশভুজা শারদপ্রাতের  মেয়ে
দুগ্গাঠাকুর মাথায় ওঠে, দুবেলা দুমুঠো খেয়ে ।
রূপং দেহি? ধ্যুত্তারিকা! ঝিয়ের আবার রূপ?
রূপ-যশ সব দেবার বেলায় দশভুজা চুপ্! 
অশ্বিনের শারদপ্রাতের বাদ্যিবাজা হল?
মহালয়ায় ঘুম ভেঙেছে এবার দুর্গা চলো।

শিউলি শিশিরে আমি যে দেখেছি কাজেরবাড়ির দোর।
তুই কি কখনো দেখেছিস মা মহালয়ার ভোর?


Tuesday, September 8, 2015

আমাদের কেষ্টা

গরম দুপুরে কাঠফাটা রোদে তবু মিটবেনা তেষ্টা
বর্ষার জলে থৈ থৈ মাঠে বিছিয়ে রাখব ঘেঁষটা
শরতে শিশিরে শিউলির আদরে মাখব পুজোর রেশটা
ভোরের শীতে আলগোছে টানি নরম তুলোর খেঁসটা

আমিও যে বাপু দেখে যাব খালি কেষ্টার শেষ চেষ্টা।
কখনো গরম, কখনো ঠান্ডা শুরু থেকে দেখি শেষটা
তবু যদি বুঝি সামলাতে পারো হতভাগা এই দেশটা!
তুমিই তো পারো ধরতে যে হাল, তুমি আমাদের কেষ্টা।

শঙ্খ-চক্র-গদা বা পদ্ম... বদলে নাও যে বেশটা
বাঁশী ফেলে দিয়ে মুকুটকে খুলে পালটে দাওনা কেশ-টা
আর দেরী নয় এবার বাঁচাও আমাদের এই দেশটা
তুমি ছাড়া আর কে আছে আমার তুমি যে আমার কেষ্টা ।

Thursday, July 30, 2015

কালিমাটীতে প্রকাশিত দুটি কবিতা

 মেয়েকাল

গভীর খাদের খতরনক বাঁকে মোড় নেয় জীবনের রোমহর্ষক পথ। আলতাগোলা আকাশের দিকে চোখ মেলে দেখি টপটপ করে চুঁইয়ে পড়ছে সূর্যের রং। ঝরে পড়ে অস্তরাগের ফাগের গুঁড়ো আমার গলায়, ঘাড়ে, পিঠে। এঁকে দেয় নীরবে আলতো চুম্বন। হেমন্তের পাখি উড়ে যায়। খেয়ালী মন দেয়ালা করে চলে অজানায় নিজের সাথে। মেয়েবেলা পড়ল সেই থেকে যখন সে আবেশে জড়িয়ে জাপটে ধরেছে আমাকে। কিশলয়গুলো কেঁপে কেঁপে উঠল মনের দেওয়াল বেয়ে। মনে হলো এ শ্রাবণ, শীত, বসন্ত সব আমার।  



সাগর-স্বপ্ন

একটা বিকেল নেবে তুমি? যার নোনা জলের সাদা ফেনায় ছুটে আসা জলের ফোঁটার রঙ সাদা। যার সাদা উড়নি নোনতা স্বাদের ঢেউয়ের পরে ঢেউয়ের
আনাগোনায় আছড়ে পড়া বালির চরে আসর বসায় মুঠো মুঠো ঝিনুক, তারা মাছ, শঙ্কর মাছেরা। দলবেঁধে আসা বকের সারি উড়ে যায় ক্যাসুরিনার ফাঁক দিয়ে,
খেয়ে যায় বাঁশপাতা মাছ সমুদ্রের তট থেকে, ঢেউ এসে নিয়ে যায় বিকেলের সূর্যাস্তের রং। সব মনখারাপের দুপুরগুলো আছড়ে পড়ে সেই ঢেউতে।
ক্লান্ত সূর্য তখন আপন মনে রঙ ছড়িয়ে চলে পশ্চিম আকাশের গায়ে রং ছড়াতে ছড়াতে অবসর নেয় ঠিক আমার মতো। যখন আমার ইচ্ছেডানায় ভর করে সাগর-স্বপ্নেরা...


Sunday, July 12, 2015

বৃষ্টি-জার্ণাল



সে যেন এক স্বপ্ন দেখা, ভোরের আনাগোনায়
চলেছি সেই মাটির টানে কিসের দোনামোনায়।
মেঘের যেন উপুড় দোয়াত, বৃষ্টি দোলাচলে
আমার যেন সব হারালো, বর্ষা এল বলে।

ওরে সব থৈ থৈ বাংলার মাঠঘাট
হাঁটুজলে ধানচারা, বর্ষার পাখসাট।
ওমা, ওমা! একি দেখি, ভেতরে ও বাইরে
আষাঢ়েই এই হাল? শ্রাবণে কি হবেরে?

Thursday, July 2, 2015

মিত্রজাল

মিসড্‌ কল যদি মিস্‌ হয়ে যায়? 
পজ্‌ড হয়ে যাবে জীবন। 
আর এসএমএস যদি সেন্ট না হয়েছে ? 
অধরা থাকবে ভুবন । 

স্মার্টফোন যদি ক্যাবলার মত 
হোয়াটস্যাপে চুপ থাকে? 
তাহলে জানবে অচল সে ফোন 
পয়সা পুড়িয়ে বকে। 

ইমেলে যদি রিপ্লাই না পাও, 
বুঝবে মাথার স্ক্রু ঢিলা 
এ যেন, 
বাড়ি বয়ে গিয়ে কড়া নেড়ে এলে 
পেলেনা দরজা খোলা। 

স্কাইপে তোমাকে পিং করে যদি 
না পেয়ে থাকি সাড়া 
তবে ধরে নেব 
মুখ দেখবেনা বলে করেছ বন্ধুহারা। 

হ্যাঙাউটে যদি ঝুলে নাই থাকো 
ঝুলে পড়ো শিগ্‌গিরি 
জীবন তোমার বৃথাই কাটবে 
এ কথা কিন্তু জরুরী !!! 

ফেসবুকে ফেস না দেখিয়ে 
শুধু কি ফেক প্রোফাইল বানাবে? 
স্টেট্যাসেতে ভায়া লাইকও পাবেনা 
 চ্যাটবক্স খালি থাকবে । 

সে যুগেতে ছিল অর্কুট, 
তাই কূটকূট করে খেতে 
এখন পাওনা তাই বুঝি তুমি 
ভাট বকে চলো নেটে ? 

সত্যযুগেতে ব্লগবাজি ছিল 
ফেসবুক এল ত্রেতাতে 
দ্বাপরেতে এল হোয়াটস্যাপ 
আরো আরো খিদে মেটাতে। 

এবার দেখব কল্কি কি আনে 
ডিজিটাল মোহ কাটাতে। 
কলিতে তবে থট মেসেজেই 
জীবন পারবে সাজাতে ।

Thursday, April 9, 2015

" ডাকনাম"




মা ডাকত পুঁটুরাণী, বাবা কেবলি পুঁটু।

রূপসোনা বলি আমি তাকে, যদিও দৃষ্টিকটু ।

তিনটি মেয়ের একটি, যদিও ছেলে আছে দু'টি ।

ঠাম্মা ডাকত আদর করে সুভদ্দোরা,

দিদা মিলিয়ে দিয়েছিল যশোধরা।

শরীর জুড়ে তিল ছিল মেয়ের, তাই স্কুলের নাম তিলোত্তমা ।

মিষ্টি চেহারার জন্য দাদামশাই বলতেন মনোরমা ।

মায়ের জুটল রাঁধুনির কাজ, মোটের ওপর এতগুলো পেট,

এই বাজারে পোষায় কি আর ? বাবার যে বন্ধ জুটমিলের গেট।

পুঁটুরাণী সবচেয়ে সুন্দরী, নাকমাটা মাটা, চোখ হাসে তার,

গায়ের রং গম-পানা, মুখটি পানপাতার। বাবা দিল পাঠিয়ে ভিনরাজ্যে ।

প্রচুর টাকার বিনিময়ে, অভাবের তাড়নায়...

পুঁটু হল গিয়ে একালের দেবদাসী। ডাকনাম সবিতা ।

এবার শুরু মেয়ের জীবনে নতুন নাটক-কবিতা।

কোন্‌ এক বাবুর মন্দিরে সে নাচত-গাইত, ফুলের মত ঢলে পড়ত

কৃষ্ণসেবা দিনের বেলায়, রাতে লম্পট বাবুর বিছানায় ।

বাবু ডাকত কত্ত নামে। পুঁটুর কি আর নামের অভাব!

সেই ছোট্ট থেকে আদর ! মা-বাবা-ঠাম্মা-দিদার!

ডাগোরডোগর মেয়েটা এখন বাবুর আদরের মোনা

আমি বাপু তারে ডাকি আমার রূপসোনা।


Thursday, March 19, 2015

ধর্ষক

ওমা, ওরা ছেলে কেন? ওরা যে কেবল ধর্ষক।  
ইজ্জত নিয়ে টানাটানি করে,মেয়ে শরীরের দর্শক। 
ওমা, ওরা পুরুষ কেন?  ওরা কি বীর্যবান?
ওদের বোধহয় অন্যজাত, ওরা শক্তিমান। 
ওমা, ওরা কি কা-পুরুষ তবে? নাকি  চতুর্থ সেক্স?
ওদের লিঙ্গ বোধহয় আলাদা, পাইরেটেড, ট্রিপল এক্স।  

ওরা ধর্ষক, লোমহর্ষক, নারীর শরীর ওদের কাছে বড়োই চিত্তাকর্ষক !
ওরা যে একটা ক্লাস! ওদের কাছে নারীর শরীর নিছক কাঁচের গ্লাস!  

Saturday, February 21, 2015

অমর আমার একুশ

তখন মাথায় শিং হয়নি হাট্টিমাটিম টিম্‌
ঘুমের ঘোরে মায়ের গানে  তোমায় চেনার দিন।
ঘুম ঘুম চাঁদ পেরিয়ে আসা,আমার বর্ণ পরিচয়
তোমাকে আঁকড়ে আরো আরো বাঁচি ,
জেগে উঠি আরো নিশ্চয়  !!!   
তারপরে তো স্কুল পেরোনো লম্বা ইঁদুর ছুট  
হাতের মুঠোয় থাকি ধরে, তোমার শাড়ির খুঁট । 
ধ্যুত্তেরি আর বিরক্তিতে পার করেছি রচনা 
একটুআধটু পরে দেখা বাংলাভাষার গয়না । 
তবুও তুমি আমার গর্ব, আমার অলঙ্কার
তোমায় ছাড়া বাঁচব কি করে? কি দেব পুরষ্কার  !!! 

Monday, February 16, 2015

c/oবিশ্বনাথের গলি


তোমার রকমসকম কেমন বাবা ?
কানে ধুতরোফুলের কলি
সিদ্ধিগাঁজায় মাত করেছ বিশ্বনাথের গলি।
উপচে পড়া মানুষ জড়ো ভক্তিরসে ডুবু
উপছে ওঠে প্রণামবাক্স  বাবা জবুথবু
সেথা কেমন আছো তুমি?
দেশের তুমি দশের তুমি জ্যোতির্লিঙ্গভূমি
একপলকে  ঝলক দেখা বিশ্বনাথের ব্র্যান্ড
ষাঁড়, সিঁড়ি আর রাঁঢ়ের মাঝে গঙ্গাপুজোর ব্যান্ড ।