অনেকগুলো চৈতালী ভোর পেরিয়েও এমন সর্বনাশের ইশারা পাইনি । আজ ছাইরঙা কুয়াশার ভোরে হাঁটতে হাঁটতে পিচের পাকা রাস্তায় । দুপাশের শিমূল পলাশের সঙ্গী মহুয়া । মহুয়া সুখী ফুল । ফুল থেকে সবজে হলুদ ফলটুকুনিও ঝরে পড়ে মনের সুখে । সেই মহুয়া সরণী ধরে পথ চলায় যে মাদকতা, তা পেয়েছি আজকের ভোরে । হলুদ ফরাস পাতা মহুয়া সরণী বেয়ে চলেছি আর পাশের গাঁয়ের আবালবৃদ্ধবণিতার কোঁচোড় ভরে সেই মহুয়া ফল কুড়িয়ে নেওয়া দেখে মন পৌঁছে গেল সেই লালপাহাড়ির দেশে...
এবার পুজোতে বোলপুরে একদল মাদল নাচিয়ের সাথে আলাপ জমেছিল । ওরা শ্যামলা গাঁয়ের শ্যামলা একদল মেয়ে । সাথে কয়েকজনের মরদ। ওদের চিকন কালো চুল, খোঁপায় বাঁধা বকের পালক, হলুদ গাঁদার ফুল, রূপোর শুলগা । লম্বাটে চোঙাকৃতির "মাদল" তালযন্ত্রটিকে আর গোলাকার তবলার মত "লাগড়া" বাদ্যযন্ত্রটিকে নিয়ে ওরা নাচে আর গান তৈরী করে । আর ওদের গান সৃষ্টির মূলে হল চৈত্রমাসের মহুয়া উত্সব । মহুয়ার মৌ জমে ওঠে ওদের ঘরে ঘরে আর ওরা নাচে, গান করে । আজকের মহুয়া কুড়োনোর সেই ছবিটা দেখে বুকে সেই মাদল বাজার শব্দ পেলাম ।
আর মনে মনে বলে উঠলাম
"ও মেয়ে তুই কুথা যাস রাঙামাটির পরে
ধামসা মাদল, মহুয়া ফুল কুথায় আছে ঘরে ? "
আজকের চৈতী ভোর উসকে দিল আমার বসন্তকে আরো একবার!