Tuesday, October 12, 2021

কন্যাকুমারী / ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়

 কন্যাকুমারী, কন্যাকুমারী কোথা যাও তুমি প্যান্ডেলে?

জামা দেব, কাপড় দেব, আদরও দেব তুমি এলে। 

কন্যাকুমারী, কন্যাকুমারী তুমি কী বসেছ মণ্ডপে? 

ফলমূল দেব, ভোগ বেড়ে দেব, পূজব তোমায় দীপধূপে। 

কন্যাকুমারী বেনারসি চেলি, মাথায় মুকুট, ওড়না 

ঠোঁটের কোণায় চিলতে হাসি, চোখে লাজের বন্যা। 

কন্যাকুমারী, কন্যাকুমারী কুমারীপুজোর লগ্ন  

ধুমধাম আজ অষ্টমীতিথি এসবই তোমার জন্য। 

কন্যাকুমারী, কন্যাকুমারী তুমি অ-রজস্বলা 

কুমারীজ্ঞানে দেবীর পুজো তবুও এ ছলাকলা। 

অঋতুমতীই অপাপবিদ্ধ? দোলাচলে পড়ি আমি 

অম্বুবাচীর কামাখ্যাপুজো সব ভুলে গেছ তুমি? 

কন্যাকুমারী কন্যাকুমারী উঠুক এই নিয়ে শ্লোগান 

ঘরের দুর্গা, জ্যান্ত দুর্গা কন্যাশ্লোকের জয়গান। 


  


Sunday, April 11, 2021

হবে হবে সব হবে

 ঘটিগরম, তরজা তুফান, উস্কানি আর দাদাগিরি, 

চোখরাঙানি, বাহুবলে হচ্ছে নেতার ভোটফেরি। 

আমার হবে, তোমার হবে, চৈত্র সেলে জামা হবে

বোশেখ পড়লে বিয়ে হবে, খাওয়াদাওয়া দেদার হবে। 

ভোট হবে, চোট হবে, জোট হবে না ঝুট হবে? 

বাড়ি হবে, গাড়ী হবে, পার্টি হবে, কভিড হবে।  

শাড়ি হবে, ফুচকা হবে, রাতবিরেতে আড্ডা হবে 

আমআদমির নোলা হবে, লুচি মাংস পোলাও হবে।  

চেবানো হবে, চাটা হবে, চোষা হবে, গেলা হবে

চর্ব্য চূষ্য লেহ্য পেয়, কচু ঘেঁচু, গেলা হবে। 

জল হবে, ঘোলা হবে, কেউ কারোর চ্যালা হবে 

ছেলে হবে, মেয়ে হবে, সরল হবে জটিল হবে। 

ঠ্যালা সাম্লাতেই হবে, মাটির ডেলা হতেই হবে

ন্যালাক্ষ্যাপা মানুষ হবে, তেলা মাথায় তেল দেবে 

মুখ্যুসুখ্যু মানুষ হবে, গল্পস্বল্প গেলা হবে। 

মুরগী হবে মাটন হবে, ছাপ্পান্ন ভোগ হবে 

গেলা হবে, খাওয়া হবে, বেহুলার ভেলা হবে। 

ভোট হবে, জোট হবে, মানুষের মেলা হবে 

কভিড হবে, বন্যা হবে, মিটিংমিছিল সব হবে। 






Sunday, April 4, 2021

নাসিগোরেং

 এক যে ছিল সাধের বাগান, রঙীন সব্জী চাঁদের হাট

মিলেমিশে মরিচ-মশলা-স্যসে সবার মজার ভাত।  

বর্ণে গন্ধে মাখামাখি, এই না হলে নাসিগোরেং? 

স্বাদ নিতে তা বানিয়ে ফেলে বোস-পাল-দাস-দে-সোরেন। 

দেশীয় নাম তেরঙ্গা ভাত খেলেই তুমি কুপোকাত। 

কমলা গাজর-বিনস কুচিয়ে, তেরঙ্গা ক্যাপ্সিকাম বিছিয়ে

ডিম ফাটিয়ে ঝুরো করে মুরগী, চিংড়ি ভেজো পরে। 

ফুরফুরে ভাত জুঁইফুলে, পেঁয়াজ পড়বে গরম তেলে। 

এবার সাজাও ভাতের বাগান, সোয়া স্যসে স্বাদ মহান। 

গোলমরিচের গুঁড়োর ঝাঁঝে ভাত ভাজা হবে সবার মাঝে। 

ভাত তেরঙা উপুড় প্লেটে এক্ষুণি তা ঢুকবে পেটে।

পেঁয়াজ ভেজে লাল করে ডিম ফাটিয়ে দিও পরে 


মুরগি কুচি দাও ছড়িয়ে, সবজি সব দাও ঘুরিয়ে

দুয়েক ফোঁটা ভিনিগার, লংকাকুচির অবারিত দ্বার। 

ভাতের সাথে জমিয়ে ভাজো, নেড়েচেড়ে সবাই সাজো।

তেরঙা ভাত, মাংস ভাজা, খাবার ঘরে আজ সে রাজা।

শোনো শোনো গপ্পো শোনো নাসিগোরেং নামটি জেনো  

এ রান্নার মন্দভালো খিদের মুখে জ্বলবে আলো।

তোমাদের যা মিক্সড ফ্রায়েডরাইস, ওদের তা নাসিগোরেং 

জমিয়ে সেটাই বানিয়ে ফেলে ঘোষ-বোস-দাস-পাল-দে-সোরেন। 

Saturday, January 2, 2021

করোনাও ভয় পেল?

করোনাসুন্দরী তাঁর ছানাপোনাদের ঘুম পাড়াতে গিয়ে আজকাল রীতিমত নাকের জলে চোখের জলে। কোভিডানন্দ এদের মধ্যে সবচেয়ে দুষ্টু। মায়ের চোখ ঘুমে জুড়ে আসছে। সারাদিন সব্বোমাটি মাড়িয়ে দুনিয়ায় সংক্রমণ ছড়িয়ে সে ক্লান্ত হয়ে পড়ে রাতের দিকটায়।শরীর দেয়না তখন। ওদিকে ভয় আছে কখন কে সাবান জল ছিটিয়ে দিল গায়ে, কে স্যানিটাইজার সংপৃক্ত করে রাখল তার যাত্রাপথ। একেই মানুষ খুব সচেতন হয়ে পড়েছে। বিজ্ঞানীরা দিন রাত এক করে ফেলেছে । মনে মনে হাসিও পায় করোনাসুন্দরীর আবার বুকের ভেতরটা ছ্যাঁত করে ওঠে। নিজে য্যাত‌ই লোককে ভয় দেখাক তার‌ও তো ভয় ধরেছে এখন। কোভিডানন্দ খেলা করেই চলেছে ওদিকে। ঘুম নেই তার চোখে, আপনি বকে চলেছে মা...কোভিড, কোভিড করে মায়, কোভিড গেছে কাদের নায়, সাতটা কাকে দাঁড় বায় কোভিড রে তুই ঘরে আয়। কোভিডানন্দ ফিক করে হেসে বলে ওঠে, এই তো ঘরেই আছি মা, তোমার কোলের কাছেই শুয়ে আছি নেপের তলায় দিব্য। কোথায় আর যাব? মা বলেন, ভয় ধরেছে বাপ আমার! কি করে তোদের যে সব বাঁচিয়ে বর্তে রেখেছি তা আমি জানি আর জানে তোদের বাপ্! কোভিডানন্দ বলে, আমাদের বাপ কোথায় মা? করোনাসুন্দরী বলে তোমাদের বাবা কি আর যে সে লোক বেটা, প্রণম্য সার্স কোভিডগোত্রীয় উচ্চবংশীয় ক্ষমতাশালী বামুন জাতীয় যার পূর্বপুরুষ স্বর্গতঃ মার্স দেবশর্মণরা বুঝেছ?  

এবার ঘুমিয়ে পড় বলছি নয়ত আমি একানড়ে কে ডাকব। আমার ফোনটা রাখ দিকিনি। এই ফোন হল যত নষ্টের গোড়া।  

কোভিডানন্দ খিলখিল করে হেসে বলে আমি ভয় পাইনা, বলেই গাইতে আরম্ভ করে আমি ভয় করব না ভয় করব না... দুবেলা মরার আগে সাবান জলে মরব না...   

বলিস নি রে অমন করে ...কার কপালে কি লেখা আছে কেউ জানেনা। 

ছেলের আমার আজ ঘুমের বেলায় ভয় না পেয়ে গানে পেয়েছে। অন্যদিন বেম্মাদত্যি, শাঁখচুন্নির ভয়ে দিব্যি ঘুম এসে যায় তার। 

মা বলে তাহলে জেগে বসে থাকো। আমি একটু গড়িয়ে নিই। 

কোভিডানন্দ মনের আনন্দে গাইতে শুরু করে... 

আমরা এমনি এসে ভেসে যাই... 

হাওয়াতে জড়িয়ে, ফুলের রেণুতে... 

নিঃশ্বাসে আর প্রশ্বাসে ভাই। 

কে আমাদের দেখাবে ভয়? 

বাতাসের সওয়ারি তে ভেসে বেড়াই, রোগ ছড়াই... 


আজ ভোর থেকেই কোভিডানন্দের শরীরটা ভালো নেই। মা' কে ঘুণাক্ষরে জানায় নি সেকথা। আসলে ভয় ঢুকেছে তার মনে। বন্ধুবান্ধব কাল সারারাত হোয়াটস্যাপে মেসেজ করছে কেবলই... জানিস কোভিড? আমাদের ডেজ আর নাম্বারড। বিষাক্ত ভ্যাকসিনে ছেয়ে গেছে বাজার! মানুষ সচেতন হয়েছে। ইমিউনিটি বুস্টার খেয়ে খেয়ে এযাবত খুব তাকত হয়েছে রে ভাই!  

Friday, December 18, 2020

"রান্নাটা ঠিক আসেনা" / ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়

 ভবানী প্রসাদ মজুমদারের "বাংলাটা ঠিক আসেনা"র প্যারোডি 

হেঁশেল আমার খুব হাইফাই, রান্নাবান্না হয়না 

জানেন দাদা, আমার আবার রান্নাটা ঠিক পোষায় না।   

মডিউলার কিচেন আমার খুব শখে বানানো 

কিচেন হব, সেরামিক টাইলস, চিমনি টিমনি লাগানো 

আমার আবার বাতিক খুব, কিচেন নোংরা করিনা  

জানেন দাদা, আমি আবার রান্নাবান্না পারিনা। 


মিক্সি টিক্সি, মাইক্রোওভেন, ওটিজি সবই মজুত 

কর্তামশায়ের বাজারের নেশা, বড়োই তরিজুত। 

কী লাভ বলুন রান্না করে? 

সবই মেলে বাড়ির দোরে 

সেইকারণেই আমি আবার তেমন কিছু বানাই না 

জানেন দাদা, আসলে আমার রান্নাটা ঠিক আসে না।


রান্না আবার কাজ নাকি, নেই কোনও ‘চার্ম’ রান্নায় 

হালুইকরে পারে যা, আমায় কি তা মানায়? 

চাইনিজ অথেনটিক 

কন্টিনেন্টল হেলদি 

বাংলা খাবারে আছেটা কি? গ্ল্যামার নেই জানেন না? 

জানেন দাদা, আমার আবার রান্নাটা ঠিক আসে না।


বাংলা রান্না যেমন তেমন, ঝোল ভাত খুব প্যানপ্যানে

ডাল-পোস্ত আলুসেদ্ধ একঘেয়ে আর ঘ্যানঘ্যানে।

এসব নিয়ে মাতামাতি, 

রান্নাঘরে হাতাহাতি 

কি যেন সব রাঁধত মায়ে? শীতের পৌষমাসে না?

জানেন দাদা, আমার আবার রান্নাটা ঠিক আসে না।


চাইনিজ সোজাসাপটা, সোজা আরও থাই 

স্যসের কেরামতি ডিমসাম্‌ স্যুই মাই। 

দইমাছ, মোচা থোড়, বোগাস আর বোরিং।

বড্ড রিচ মালাইকারি, আমি আবার ফড়িং। 

তবুও খেতাম যদি পেতাম, রাঁধতে ইচ্ছে করেনা  

জানেন দাদা, আমার আবার রান্নাটা ঠিক আসেনা। 


বাঙালী তো নালেঝোলে, চচ্চড়ি আর অম্বলে 

পোস্ত-শুক্তোয় নাড়িকাটা, ছ্যাঁচড়া-ভাপার স্বাদ পেলে 

রান্নার লোকের বড়ই অভাব

স্যুইগি জ্যোম্যাটো খাওয়াই স্বভাব

ওদের হাতে রান্না খেলে জুতসই ঠিক হয়না 

জানেন দাদা, আমার আবার রান্নাবান্না পোষায় না। 


বিদেশী রান্না না পারি, হেঁশেল আমার জব্বর 

বাঙালীর রান্না পারা কি আর এমন খবর? 

স্যান্ডুইচ, পিতজা, বার্গার এসব নিয়েই বাঁচি 

ভাত রুটি সব বাদ দিয়ে দিব্য বেঁচে আছি। 

এসব রান্না নিয়ে এখন কেউ সুখের স্বর্গে ভাসে না

জানেন দাদা, আমার আবার বাংলা রান্না আসেনা।


বাংলা রান্না তেল ঝাল আর হলুদ নুনে ঠাসা 

তার চেয়ে তন্দুরি আর কাবাবেই ভালোবাসা। 

মডিউলার কিচেন আমার, তেল কালি মোটে পড়েই না

জানেন দাদা, আমার আবার রান্নাবান্না জমেই না । 

Monday, September 28, 2020

এই সেই জন্ম-উপত্যকা

 সেই মৃত্যু উপত্যকা দেখে এলাম কবি। কি ভয়ংকর সে রূপ! 

কি দুর্গম তার তুষারলীলা। অহোরাত্র ভেজা ভেজা সৃষ্টিরহস্যের উপত্যকা। 

শীতলতায় এত শীত্কার হয় কবি? 

সে যেন সত্যি রংয়ে-তুলিতে আঁকা ছবি। 

পুরুষ আর প্রকৃতি দুয়ে মিলে এ কি সম্ভোগ দৃশ্য! 

পাহাড়ের গাম্ভীর্যে এত পৌরুষ? চোরা গ্লেসিয়ার হার মেনে যায় তার কাছে। 

আকাশের নীল, তুঁতের মত উজ্জ্বল হয়ে ওঠে সেই সম্ভোগ লীলা দেখতে দেখতে। 

তুষারের এই ঝর্ণাধারায় পাহাড় যেন কলকলিয়ে ওঠে। 

সেই মৃত্যু উপত্যকায় কবি, তুমি শুনেছিলে মরণ সঙ্গীত। 

আর আমার মত তুচ্ছ একজন শুনতে পেল জীবনের গান, বাঁচার গান। 

নদীর বহমানতা, পাহাড়ের শীতলতা আর আমার চোখ সাক্ষী রয়ে গেল 

পাহাড়ে চুক্তি স্বাক্ষরিত হল আমার সাথে মেঘের। 

মেঘের মিনার স্থানান্তরিত হল মৌসুমীর দেশে। 

বৃষ্টি ফোঁটারা উধাও তখন দিনকয়েকের জন্য। 

এ সেই মৃত্যু উপত্যকা কবি! 

আমি পা রাখলাম মরুপ্রান্তরে। 

যক্ষের রামগিরি পর্বত খুঁজে পেলাম যেন। 

বিরহিনীর কাছে মেঘ-মেল পৌঁছেচে তখুনি। 

আমার নীলচে আকাশের নীচে হলুদ বালুকাবেলা। 

কত আঁকাবাঁকা শৈল্পিক সাজগোজ সে বালির! 

উট চলেছে সেখানে মুখটি তুলে 

আর আমি পড়ে র‌ইলাম ঝুলে। 

সোনাগলা রোদ্দুর যেখানে চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়ে আইসিকলের ওপরে, 

স্ট্যালাগটাইটের মত বরফ ঝুলতেই থাকে বরফের গায়ে..

এই কি সেই মোহমায়া? যার অমোঘ টানে আমি হ‌ই ঘরছাড়া? 

তুমি তো বলেছিলে কবি, এ মৃত্যু-উপত্যকা আমার দেশ নয় 

আমি কিন্তু বারেবারে বলে এলাম, 

এই আমার দেশ, এই আমার জন্ম-উপত্যকা! 

পাহাড়ের প্রতিটি ভাঁজ আমার চেনা এখন। তেরঙ্গা পর্বতের চাদরের প্রতিটি ভাঁজ আমার চেনা।  

তুষারসাদা স্রোতকে আমি বিলক্ষণ চিনি এখন। 

ঠিক যেমন চিনি আমার মা, বাবাকে...

আমি‌ই তো সে, যে সৃষ্টিপাথরের রহস্য উন্মোচন করে 

চিনতে শিখল সেই জন্ম-উপত্যকা!

Monday, September 14, 2020

লেটস পার্টি টু'নাইট

  

গোদাবরী তীরে, ক্যাডবেরী মুখে, নাচে হ্যালবেরী মম্‌  

কোলাভেরী গানে, জিন-শেরী হাতে, নাচে মেরী-কেরী টম্‌ 

দোস্ত তেরী-মেরী, জ্বালাইল বিরী, ধরি শ্যামা-গোরী হাত। 

কত সহচরী, খায় ভেলপুরী, চটী কোলাপুরী কুপোকাত ।   

প্রেমে জলপরী, পরে সাতনরী,  গায় দরবারী কানাড়া

শাড়ী বালুচরী, পরে নসীপুরী,  খায় ভেজ-পকোড়া।

নটী শর্বরী, নাচে কুচিপুরী, রাসভারি বরাবরি 

আড়চোখে চায়, রসভরী খায়, অপছন্দ দাদাগিরি ।

রায় নরহরি, খালি ভাঙে সিঁড়ি, জড়াজড়ি করে দোতলায়

পাল বলহরি, গেয়ে আশাবরী, পায় কানাকড়ি ও'পাড়ায় ।

কেউ ধরাধরি, কেউ জোরাজুরি, খোঁটে ফুসকুড়ি অনীহায়

চাষী রাখোহরি, ছেড়ে থোড়বড়ি, রাঁধে চচ্চড়ি সেপাড়ায় ।

কেউ শাদীকরি, করে ছাড়াছাড়ি, বাড়াবাড়ি বেশীবেশী।

আমি পায়েপড়ি, বলি ধ্যুত্‌‌তেরী, আহামরি দিবানিশি।